রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:১০ অপরাহ্ন
মোঃ বিপ্লব, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) থেকে:: ‘উচ্ছিষ্ট, গোবর, তরকারির খোসাসহ আবর্জনা দিয়ে কেঁচোর মাধ্যমে প্রক্রিয়া করে আদর্শ ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। এ সার ধান, ভূট্টা, আলু, মাল্টা বাগানের জন্য খুবই উপকারী। কেঁচো কম্পোস্ট একটি জৈব সার যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। এই কেঁচো সার উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের কৃষাণীরা। সফলতা পাওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীও হয়েছেন প্রায় শতাধিক কৃষাণী। সারের গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় কৃষক এবং নিজেদের চাহিদা পূরণ করে এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের চাহিদা পূরণ করছে এই ভার্মি কম্পোস্ট সার।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় লেহেম্বা ইউনিয়নের পকম্বা গ্রামে ৩০ জন নারীকে কেঁচো সার উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যেক বাড়িতে স্লাব দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সার উৎপাদনের শেড।
পকম্বা চাকলাপাড়া কৃষক গ্রুপের সদস্য আলেয়া, শহরবানু জানান, ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের বর্তমানে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে একেক পরিবারে পনেরশ থেকে ২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। যা আমাদের পরিবারে নিয়ে এসেছে স্বচ্ছলতা বলে জানান ভার্মি কম্পোস্টের সেই কারিগরেরা। কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (সিডিএ) দিনাজপুর এর আর্থিক সহায়তায় উপেজেলার গাংগুয়া জৈব কৃষি চর্চা নারী উন্নয়ন জনসংগঠনের ৩৬ জন নারীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গত বছর এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ সংগঠনের সহায়তায় গড়ে তোলা হয়েছে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরির শেড। বাড়ির কাজ শেষ করে অবসর সময়ে এটা নিয়েই নারীদের ব্যস্ততা। কারণ ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও বিপণনে তাদের সংসারে এনেছে স্বচ্ছলতা।
গাংগুয়া জনসংগঠনের সদস্য মোছাঃ হাজেরা জানান, সিডিএ’র সহযোগিতায় গত বছর আমরা সিমেন্টের ২০টি হাউস তৈরি করি। এ শেড থেকে যে সার উৎপাদন হয় সে সার আমরা ১২-১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এ পর্যন্ত আমরা এই শেড থেকে লক্ষাধিক টাকার অধিক কেঁচো সার বিক্রি করেছি। আশরাফি নামের এক নারী সদস্য জানান, এর আগে আমরা বাড়িতে স্লাবে এ সার উৎপাদন করতাম। এখন বাড়িতে না করে আমরা আমাদের সংগঠনের সদস্যরা একত্রিত হয়ে এ শেডের ভিতরে জৈব সার উৎপাদন করছি।
পয়গাম আলী নামের এক সদস্য জানান, শেডের ভিতরে অর্থাৎ বাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন যেমন সহজ তেমনি এর চাহিদাও বেশি। এ কাজ থেকে বিনা ঝামেলায় অতিরিক্ত আয় হয়, পাশাপাশি নিজেদের জমিতেও ব্যবহার করছি এ সার। এই সার ব্যবহারের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে আমরা অনেক দুর এগিয়ে যাব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, স্থানীয় কৃষকদের মাঝে কেঁচো সারের চাহিদা অনেক বেশি। কেঁচো সার উৎপাদনে আমরা কৃষি দপ্তর থেকে বিভিন্ন এলাকা এবং সংগঠনের নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। বিভিন্ন সেমিনার, ওঠান বৈঠকে আমরা কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে এবং কৃষকদের রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়াতে পরামর্শ দিয়ে থাকি।